সার্কিট ব্রেকার নিয়ে আলোচনা

বিদ্যুৎ শক্তির চাহিদাকে আধুনিক সভ্যতার সূচক হিসেবে প্রকাশ করা হয়। আলাে জ্বালাতে, তাপ ৩) কারখানার মেশিন
চালাতে বিদ্যুৎ শক্তির প্রয়োজন হয়। বৈদ্যুতিক ত্রুটি রোধ করে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ একান্ত প্রয়ােজন। এ কাজে জেনারেটর,
ট্রান্সমিশন লাইন, ডিস্ট্রিবিউশন লাইন এবং ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি অন-অফ করতে পুৰ, পাক বেকার, রিলে ইত্যাদি ব্যবহার করে
সুইচিং এবং প্রটেকশনের (নিরাপত্তার) কাজ করা হয়। ঐ সকল সরঞ্জাম সুইচগিয়ার বলে। আমাদের দেশের বিদ্যুতের
সিস্টেম গ্রিড সিস্টেম। ইন্টার কানেকটেড ওভার হেড এ সিস্টেমে বিভিন্ন ধরনের জুটি প্রায়ই ঘটছে। এ সমস্ত তুটি থেকে
সিস্টেমকে রক্ষা এবং পিরচালত। করার জন্য ফিউজ, সার্কিট ব্রেকার, রিলে ইত্যাদি রক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। সাধারণ
অবস্থায় অন-অফ করার কাজে সুইচ এবং ত্রুটি দেখা দিলে অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহ থেকে সিস্টেম রক্ষায় সার্কিট ব্রেকার,
রিলে ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। দামের বিষয় ছাড়া রক্ষণ যন্ত্র হিসেবে সার্কিট ব্রেকার সর্বোত্তম বা সবচেয়ে সুবিধাজনক। ফিউজের
সুবিধা থাকা সত্ত্বেও হাই ভোল্টেজ এবং হাই কারেন্টে সার্কিট ব্রেকার খুবই প্রয়ােজন। সার্কিট ব্রেকার নাে লােড, ফুল লােড
এবং শর্ট সার্কিট যে কোন অবস্থায় হাত দিয়ে বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে। অপারেট করে। আলোচ্য অধ্যায় সার্কিট ব্রেকার সম্পর্কে
প্রাথমিক আলোচনা করা হয়েছে।।
সার্কিট ব্রেকারের সংজ্ঞা (The meaning of circuit breaker) : সার্কিট ব্রেকার একটি সুইচিং ও
প্রটেকটিভ ডিভাইস, যা দুটি মৌলিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।
(১) সিস্টেম পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে সুইচিং করতে,
(২) শর্ট সার্কিট জনিত তুটিতে স্বয়ংক্রিয় অপারেশনের জন্য। 
 বৈদ্যুতিক পাওয়ার সিস্টেমের ত্রুটিতে বা ওভারলােডজনিত কারণে মাত্রাতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহে সিস্টেম ও ব্যবস্থা।
 যত্রপাতকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার জন্য যে স্বয়ংক্রিয় ডিভাইস ব্যবহার করা হয় তাকে সার্কিট ব্রেকার বলে।।
 সার্কিট ব্রেকারের স্বয়ংক্রিয় অপারেশনের জন্য রিলে কাজ করে। বৈদ্যুতিক পাওয়ার সিস্টেমের ক্রটিতে যে।
 মাত্রাতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহিত হয় তাতে ডিভাইস ও সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এরূপ দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা।
 করতে সার্কিট ব্রেকার উপযোগী প্রটেকটিভ ডিভাইস।  আবার সিস্টেম পরিচালনায় সুইচিং করতে এবং রক্ষণাবেক্ষণে
সিস্টেম অপারেট করতে এটি ব্যবহার হয়।  সুতরাং আমরা বলতে পারি, সার্কিট ব্রেকার একটি স্বয়ংক্রিয় প্রটেকটিভ ডিভাইস,
যা প্রয়ােজনে সুইচিং ডিভাইস। হিসেবে কাজ করে। সার্কিট ব্রেকারের ক্ষমতাকে কেভিএ বা এমভিএ দিয়ে লেখা হয়।

 

সার্কিট ব্রেকার প্রয়োজনীয়তা (Necessity of circuit breaker) : বৈদ্যুতিক শক্তি বণ্টন ব্যবস্থায়। নির্ধারিত ভোল্টেজ,
ফ্রিকোয়েন্সি, ওয়েব ফর্ম গ্রাহকের নিকট বিদ্যুৎ সাপ্লাই করা প্রয়ােজন। তিন ফেজ ইণ্টার। কানেকটেড পাওয়ার সিস্টেমে
হাই ভোল্টেজ ট্রান্সমিশন এবং লো ভোল্টেজ ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবস্থা প্রচলিত। নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যবহারযোগ্য বিদ্যুৎ
সাপ্লাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। সিস্টেমের সুষ্ঠু পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সার্কিট ব্রেকার ব্যবহারের গুরুত্ব
অপরিসীম। সিস্টেমে মান সম্পন্ন সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার না। করলে সংঘটিত বৈদ্যুতিক ত্রুটির জন্য ব্যবহৃত লাইন, সুইচ
গিয়ার, ট্রান্সফরমার, যন্ত্রপাতি সবই নষ্ট হতে পারে। সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার না করলে সিস্টেম অফ ও অন করা যাবে না।
সার্কিট ব্রেকার অফ না করে আইসােলেটর, ফিজ ওপেন করা যাবে না এবং লাইন, ট্রান্সফরমার, বাসবার এর রক্ষণাবেক্ষণ
সম্ভব হবে না। অফার ইভা লাহনের মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। ওভার লোড, শর্ট সার্কিট, লাে ভােল্টেজজনিত কারণে।
সার্কিট স্বয়ংক্রিয়ভাবে অফ বা বন্ধ করতে সার্কিট ব্রেকার সবচেয়ে উপযোগী রক্ষণযন্ত্র। 
সার্কিট ব্রেকারের প্রকারভেদ (Classification of circuit breaker) : সার্কিট ব্রেকারের গঠন,
অপারেশন, কার্যনীতি ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়-
১. এয়ার সার্কিট ব্রেকার, ২. অয়েল সার্কিট ব্রেকার এবং ৩. সালফার হেক্সা-ফ্লোরাইড (SF%) সার্কিট ব্রেকার।
আর্ক নির্বাপনের ব্যবস্থা অনুসারে এয়ার সার্কিট ব্রেকার আবার দু প্রকার
(ক) সাধারণ এয়ার সার্কিট ব্রেকার ও
(খ) এয়ার ব্লাষ্ট সার্কিট ব্রেকার।
তেলের পরিমাণের উপর নির্ভর করে অয়েল সার্কিট ব্রেকার আবার দুই রকম
(ক) মিনিমাম বা মল বা লাল অয়েল সার্কিট ব্রেকার ও
(খ) ব্যাংক অয়েল সার্কিট ব্রেকার।
কার্যনীতির উপর ভিত্তি করে বাঙ্ক অয়েল সার্কিট ব্রেকার আবার দু রকম হয়ে থাকে।
(১) প্লেইন ব্রেক টাইপ বাঙ্ক অয়েল সার্কিট ব্রেকার ও
(২) আর্ক নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক অয়েল সার্কিট ব্রেকার।

সার্কিট ব্রেকারের মূলনীতি : বিদ্যুৎ সিস্টেম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সার্কিটের অফ-অন করার কাজে সার্কিট ব্রেকার ব্যবহৃত হয়। সাধারণভাবে সিস্টেমের ত্রুটির কারণে খুব বেশি কারেন্ট প্রবাহিত হলে। সার্কিট ব্রেকার স্বয়ংক্রিয়ভাবে (অটোমেটিক্যালি) ত্রুটিপূর্ণ অংশ সাপ্লাই থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। স্বংয়ক্রিয়ভাবে। সার্কিট ও সার্কিট ব্রেকারের অপারেশনের জন্য এর সাথে সিটির মাধ্যমে রিলে এবং ট্রিপিং সার্কিট যুক্ত থাকে।

সার্কিট ব্রেকার

 

চিত্র অনুযায়ী লাইনের ফ’ চিহ্নিত স্থানে ত্রুটির কারণে প্রবাহিত মাত্রাতিরিক্ত কারেন্টের আনুপাতিক কারেন্ট। সিস্টেমে
সংযুক্ত সিটি’র সেকেন্ডারি কয়েল দিয়ে প্রবাহিত হযে রিলের কয়েল উত্তেজিত করে এবং এতে ট্রিপ সাকিট অন হয়ে যায়।
আর তখন সার্কিট ব্রেকার স্বয়ংক্রিয়ভাবে অফ হয়ে যায়। এভাবে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সাকিট। ব্রেকারের কাজ সংঘটিত হয়।
যেহেতু সিস্টেমের ৮০% ত্রুটি আপনা আপনিই দূর হয় সেহেতু অল্প সময় পরই সার্কিট ব্রেকার অন করে দিলে প্রায় ক্ষেত্রেই
সিস্টেম চলতে থাকে।
আর্ক : বৈদ্যুতিক পাওয়ার সিস্টেমে ত্রুটিজনিত কারণে বা ওভার লােডজনিত কারণে মাত্রাতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহ শুরু হলে
রিলের মাধ্যমে সার্কিট ব্রেকারের চলনক্ষম কন্ট্যাক্ট খুলতে আরম্ভ করে আর তখনই দু কন্ট্যাক্ট-এর সংযােগস্থলে পার্কিং বা
ফুলিঙ্গ দেখা দেয়। একেই আর্ক বলে। সার্কিট ব্রেকারের অপারেশনে সৃষ্ট আর্ক মারাত্মক ক্ষতিকর। আর্ক দীর্ঘস্থায়ী হলে
অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহ হতেই থাকে এবং সার্কিট ব্রেকারের কন্ট্যাক্টসমূহের ক্ষতি হতে থাকে। ভালাে সার্কিট ব্রেকারে এটি
দ্রুত বন্ধ করার ব্যবস্থা থাকে, যা ব্রেকারের একটি ভালাে গুণ। বাতাসের চাপ ও সার্কিট ব্রেকারের তেল এবং তেলের চাপ
প্রয়োগ করে আর্ক দূর করা হয়। আর্ক উৎপন্ন : বৈদ্যুতিক পাওয়ার সিস্টেমে ত্রুটিজনিত কারণে বা ওভার লােডজনিত
কারণে মাত্রাতিরিক্ত প্রবাহ শুরু হলে রিলের মাধ্যমে সার্কিট ব্রেকারের চলনক্ষম বা মুভিং কস্ট্যাক্ট খুলতে আরম্ভ করে তখনই
দু এর সংযােগস্থলে আর্ক দেখা দেয়। ব্রেকারের কন্ট্যাক্ট খােলার মুহূর্তে কন্ট্যাক্টগুলাের মাঝে খুব অল্প ফাকের। কারণে খুব
বেশি রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয় এবং কারেন্ট প্রবাহে I2R পাওয়ার লসে প্রচুর তাপ সৃষ্টি হয়। স তাপে বাতাস ও তেল
আয়ােনাইজড হয় এবং মুক্ত ইলেকট্রন তৈরি করে। এর ফলে কারেন্ট প্রবাহ অব্যাহ ফলে আর্ক তৈরিও অব্যাহত থাকে।
বাতাসের চাপ বা তেলের প্রবাহ ঘটিয়ে সৃষ্ট আর্ক দ্রুত অপসারণের সার্কিট ব্রেকারের যথাযথ অপারেশন সম্ভব হয় এবং আর্ক
নিভে যায়। 
সার্কিট ব্রেকারের সাধারণ গঠন : সার্কিট ব্রেকারের সাধারণ গঠন নিচে বর্ণনা করা হল। ব্রেকারের মূল নিম্নরূপ-
১. স্থির বা ফিক্সড কন্ট্যাক্ট, ২. মুভিং বা চলমান কন্ট্যাক্ট, ৩, অপারেটিং রড বা লিভার, ৪. ইনসুলেটর বুন, ৫। ভেন্ট পাইপ,
৬. স্প্রিং, ৭. হাতল বা নব, ৮. ট্যাংক বা ধারক, ৯. ঢাকনা ইত্যাদি উল্লেখযােগ্য। ব্রেকারের বয়থয়। অপারেশনের জন্য এতে
দু’ টি লিভার, একটি বৈদ্যুতিক চুম্বক ও দু’টি প্রিং থাকে। কন্ট্যাক্ট লিভারের সাথে। একটি স্প্রিং আটকানাে থাকে, যা হােল্ডিং
লিভারকে চুম্বকের বিপরীত দিকে টেনে রাখে। বৈদ্যুতিক চুম্বকের কয়েলটি লাইনের সাথে সরাসরি সিরিজে সংযুক্ত থাকে
অথবা, কারেন্ট ট্রান্সফরমারের সাথে সংযুক্ত থাকে। সম্পূর্ণ অংশগুলােকে একটি ইস্পাত নির্মিত বক্সে স্থাপন করা হয় যাকে
ঢাকনা বলে। কন্ট্যাক্ট লিভারকে চাপ দিয়ে ব্রেকার। বন্ধ করার জন্য একটি প্লাষ্টিকের নব বা হ্যান্ডেল থাকে। এতে চাপ দিলে
ট্রিপিং সার্কিট দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হওয়া শুরু হয় এবং ব্রেকার ট্রিপ করে। অপারেশনের সময় আর্কজনিত তাপে যে
গ্যাসের সৃষ্টি হয় তা ট্যাংক থেকে বের হওয়ার জন্য ট্যাংক বা ধারকের উপরিভাগে ভেন্ট পাইপ থাকে। অতিরিক্ত কারেন্ট
প্রবাহিত হলে চুম্বকের আকর্ষণে হেল্ড লিভার নেমে আসে। তার ফলে প্রিং-এর টানে কন্ট্যাক্ট তার সরে যায় এবং সার্কিট
খুলে যায়।
সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার (Uses of circuit breaker) : বিদ্যুৎ সিস্টেমের সুষ্ঠু পরিচালনায়, রক্ষণাবেক্ষণে ব্যাপকভাবে
সার্কিট ব্রেকার ব্যবহৃত হয়। বিদ্যুৎ সিস্টেম এর ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে এর ব্যবহার উল্লেখ করা হল
(১) প্রয়োজন অনুসারে পাওয়ার লাইন অন-অফ করতে সার্কিট ব্যবহার করা হয়।
(২) বৈদ্যুতিক লাইনে ত্রুটির জন্য ক্ষয়-ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে, এটি ব্যবহৃত হয়।
(৩) সাপ্লাই ব্যবস্থার ত্রুটিপূর্ণ অংশকে ত্রুটিমুক্ত অংশ থেকে আলাদা করতে, এটি ব্যবহৃত হয়।
(৪) সিস্টেমের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে সার্কিট অফ করতে, এটি ব্যবহৃত হয়।
(৫) অয়েল সার্কিট ব্রেকার মূল্য সাব স্টেশন, বড় বড় শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত হয়।

You may also like...

Leave a Reply