আন্ডার গ্রাউন্ড ক্যাবল সংস্থাপন।

আন্ডার গ্রাউন্ড ক্যাবল সংস্থাপন। 

 
Underground Cable

 

আন্ডার গ্রাউন্ড ক্যাবলঃ 
আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল বলতে মাটির নিচে ব্যবহারযোগ্য পর্যাপ্ত ইন্সুলেশন বিশিষ্ট ক্যাবলকে বুঝায়। এই ক্যাবলে।
প্রয়ােজনীয় পরিমাণ ভােল্টেজ প্রতিরােধ করার মত ইনসুলেশন দেওয়া হয়। ঘনবসতিপূর্ণ শহর এলাকায়,
শিল্প কারখানা ও অফিস এলাকায় আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল ব্যবহার করা সুবিধাজনক। ওভারহেড লাইনের
তুলনায় প্রাথমিক খরচ বেশি হলেও আন্ডার গ্রাউন্ড লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কম এবং লাইনে দোষ-ত্রুটি হওয়ার
সম্ভাবনা কম।
অ্যালুমিনিয়াম বা তামার পাকানে তারের কোর, পিভিসি তৈলাক্ত কাগজের ইনসুলেশন, জল নিরােধক ধাতব
আবরণ, ধাতব আৰ্মার ইত্যাদি দিয়ে এই ক্যাবল তৈরি করা হয়।
আন্ডার গ্রাউন্ড ক্যাবল সংস্থাপনঃ
আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল সংস্থাপন বলতে আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল কি যথাযথ নিয়মের মাটির নিচে স্থাপন করার
পদ্ধতিকে বোঝায়।
ক্যাবল স্থাপনের কাজটিকে তিনটি প্রধান অংশে ভাগ করা হয়। যথা –
(ক) পরিখা খনন করা।
(খ) ক্যাবল বিছানায়
(গ) পরিখা ভরাট করা
পরিখা খনন করাঃ পরিখা খননের পূর্বে ক্যাবলের পথ চিহ্নিত করে নিতে হবে। কোন পথে ক্যাবল নিয়ে গেলে
বাক, রাস্তা পারাপার এবং খরচ কম হবে তা বিবেচনা করে ক্যাবলের পথ নির্ধারণ করা হয়। প্রয়ােজন হলে
টেলিগ্রাফ, টেলিফোন, গ্যাস, রেলওয়ে ইত্যাদি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।
ক্যাবলের পরিখা যতটা সম্ভব রাস্তার পাশ দিয়ে খােড়া উচিত। রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে পরিখা না খুড়ে সুড়ঙ্গ।
করে নেয়া ভালাে। আড়াআড়ি রাস্তা পার না করে একটু তীর্যকভাবে রাস্তা পার করা উচিত।
এইচটি এবং এলটি ক্যাবল পাশাপাশি থাকলে এইচটি ক্যাবল রাস্তার দিকে এবং এলটি ক্যাবল রাস্তা হতে দূরে থাকবে। 
টেলিকমিউনিকেশন ক্যাবল কাহারছি শাওয়ার কারণ অন করতে হলে দুটি ক্যাবলের মধ্যে অনুভূমিক বা
খাড়া ব্যবধান ১০ সেমি, হতে হবে। কোনাে অবস্থাতেই কান ৩০ সেমি, এহকম হওয়া উচিত নয়।
ক্যাবলের শাসি অনুযায়ী একটি ক্যৰৰে জন “খ” অ ৩০০ ৪০০ মিমি, হতে হবে। একই পরিখায়।
একাধিক ক্যাবল স্থাপন করার প্রয়ােজন হলে দুটি ক্যাবলের মধ্যে ১৫০ হতে ৪০০ মিমি ব্যবধান থাকা
প্রয়োজন।
গরে গভীরতা কতটুকু হবে তার কোনাে ইঞ্জিনিয়ারিং সূত্র নেই। তবে এমনভাবে গর্ত করতে হবে যাতে
যানবাহন চলার সময় উতৃত কুশনের ফলে ক্যাবলের কোনাে ক্ষতি না হয়। সাধারণত ১১০০ ভােল্টের ক্ষেত্রে
৫০০ মিমি, ১১ কেভি হতে ৩৩ কেতি পর্যন্ত ১০৫০ মিমি, এবং ৬৬ কেভি হতে ১৩২ কেভি পর্যন্ত কমপক্ষে
১২০০ মিমি, হওয়া দরকার। 
ক্যাবল বিছানােঃ পরিখা খননের কাজ শেষ হয়ে গেলে ঐ পরিখায় ক্যাবল স্থাপন করতে হয়।
তিনটি পদ্ধতিতে আন্ডার গ্রাউন্ড ক্যাবল স্থাপন করা হয়। যথা –
(১) সরাসরি স্থাপন পদ্ধতি
(২) টানা অবস্থায় ক্যাবল স্থাপন পদ্ধতি
(৩) নিরেট অবস্থায় ক্যাবল স্থাপন পদ্ধতি।
উপরোক্ত ক্যাবল স্থাপন পদ্ধতি গুলো নিচে বর্ণনা করা হল –
সরাসরি ক্যাবল স্থাপন পদ্ধতিঃ 
গর্ত খনন শেষ হলে গর্তের মধ্যে বালি বা ঝুরঝুরা মাটি দিয়ে ৫০ হতে ৭৫ মিমি. পর্যন্ত পুরু গদি করে দিতে
হবে। তারপর ক্যাবলের ড্রাম থেকে ক্যাবল টেনে গর্তের মধ্যে সুন্দরভাবে বসিয়ে দিতে হবে। এ কাজের জন্য
মাঝে মাঝে লােক দাঁড় করিয়ে দিতে হবে। গর্তের মধ্যে ক্যাবলটি টান টান করে না ফেলে একটু আঁকাবাকা করে
ফেলাই ভালো।
পরবর্তীতে মাটি বসে গেলে ক্যাবলের উপর ১৫০ মিমি, এর মত ঝুরঝুরা মাটি ফেলে এর উপর ইটের সারি বা
কংক্রিটের চঙ বসিয়ে দিতে হয় এবং এর উপর ৩০০ মিমি. পর্যন্ত মাটি উচু করে দিতে হয়। এভাবেই মাটির
মধ্যে সরাসরি ক্যাবল স্থাপন করা হয়। 
টানা অবস্থায় ক্যাবল স্থাপন পদ্ধতিঃ 
যেখানে বারবার খনন করা অসুবিধাজনক সেখানে রেল বা সড়ক পথের পারাপারে এক বা একাধিক কংক্রিট বা লােহার
পাইপ সরাসরি পরিখার মধ্যে অথবা সুড়ঙ্গ পথে স্থাপন করা হয় এবং পাইপের ভেতর দিয়ে ক্যাবল টেনে নেয়া হয়। কংক্রিট
বা লােহার এই ধরনের পাইপকে ডাক্ট বলে। 
নিরেট অবস্থায় ক্যাবল স্থাপন পদ্ধতিঃ
নিরেট অবস্থায় পরীক্ষার তলায় পোড়ামাটির, ঢালাই লোহা, অ্যাসফল্ট বা বিটুমিনের পাত্র রাখা হয়। এই সিস্টেমে বিশেষ
পারখায় ট্রাফিং (Troughing) এর মাধ্যমে ক্যাবল টেনে নেয়া হয়। ট্রাফিং সাধারণত পাথর বা বিশেষ ধরনের কাঠের
সরু ও ঢাকনাবিহীন নর্দমার মত নির্মিত হয়ে থাকে। ট্রাফে ক্যাবল ফেলার পর অ্যাসফল্ট বা বিটুমিন জাতীয় কম্পাউন্ড।
দ্বারা ঢেকে দেয়া হয়। 
পরিখা ভরট করাঃ  ক্যাবলের পরিখা ভরাট করার আগে ৫০০ কোস্ট বা ১০০০ ভােল্ট মেগার দ্বারা ক্যাবলের
ইন্সুলেশন পরীক্ষা করে নিতে হয়। সরাসবিতাবে পরিখায় থাপিত ক্যাবল ক্ষেত্রে প্রথমে ক্যাবলের উপর ৬
(১৫০ মিমি) পরিমাণ বালি বা তুতুর মা নিয়ে এক গলি করতে হয়। এরপর ক্যালকে মাঝামাঝি রেখে
পরীক্ষার আড়াআড়ি পরস্পর সংলগ্ন ইটের সৰি ৰা কংক্রিটের চাঙ্গা বুঝিয়ে দিতে হয়। এরপর পরিখটি মাটি
দিয়ে সম্পূর্ণ ভরাট করে নিতে হয়। পরিখার মাঝখানে মাটি ২ -৩ উঁচু রাখতে হয় যাতে মাটি বসে গিয়ে
ভূমির সমান থাকে। ক্যাবলের পথের নিশানা এবং এর সংযোগ স্থাপনের চিহ্ন রাখার জন্য মাঝে মাঝে মার্কিং
প্লেট বসাতে হয়। ডাকের ক্ষেত্রে সরাসরি মাটি দিয়ে পরিখা বা সুড়ঙ্গ ভরাট করে দিতে হয়। নীরেট অবস্থায়
পাত্রের উপর অ্যাসফল্ট টালি বা লােহার ঢাকনা দিয়ে তার উপর মাটি দিয়ে পরিখা ভরাট করতে হয়।
আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল স্থাপনের সুবিধা ও অসুবিধাঃ 
আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল স্থাপনের সুবিধা :
(ক) বাহ্যিক কারণে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
(খ) অব্যাহত সেবার জন্য অধিক নিরাপদ ও নিশ্চয়তা প্রদান করে।
(গ) অন্যান্য যােগাযােগ ব্যবস্থার সাথে তেমন বিপত্তি ঘটায় না।
(ঘ) পরিবাহীর মধ্যস্থিত দূরত্ব কম হওয়ার কারণে ইন্ডাকটেন্সজনিত ড্রপ কম হয়। এ কারণে ভােল্টেজ রেগুলেশনের মান
উন্নত।
(ঙ) ত্রুটিজনিত কারণে সৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে উদ্ভূত অবস্থায় মানবজীবন ও সম্পদের জন্য কম ঝুঁকিপূর্ণ।
(চ) রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কম।
 

You may also like...

Leave a Reply