অধিক বিল এবং কিভাবে সচেতনা অবলম্বন করবেন?

ভূতুড়ে বিল কি?

ধরুন, আপনি মনস্থির করলেন গ্রামের বাড়ি যাবেন। এখন বাড়ি থেকে বের হবার আগে আপনি আপনার ফ্ল্যাট এর লাইট, ফ্যান সব সরঞ্জাম বন্ধ করলেন।

বাড়ি গিয়ে আপনার মা এর কাছ থেকে শুনলেন ভূতুড়ে কথাবার্তা। কি রকম?

আপনার গ্রামের বাড়িতে শুধু একটা ফ্যান, একটা লাইট জ্বলে। অথচ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আপনার মাকে ৩০ হাজার টাকার মাসিক বিল ধরিয়ে দিল যেটা একটা কোম্পানির বিলের সমান। তারপর এক মাস বাড়ি থাকার পর আপনি আবার আপনার শহরের বাসায় ফিরে এলেন।

মাস শেষে যখন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড যখন আপনার হাতে বিদ্যুৎ বিল ধরিয়ে দিল তখন আপনি রীতিমতো অবাক। হাজার টাকার বিল অথচ আপনি গত মাস পুরোটাই গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। অবাক করার বিষয় না? হচ্ছেটা কি এসব? ভূতে কি তাহলে আপনার লাইট, ফ্যান ব্যবহার করেছে? এই বিলকেই বলা হয় ভূতুড়ে বিল।

এখন এটা কোন ভূতসৃষ্ট ঘটনা নয়। এটা মূলত অসাধু প্রকৌশলীদের কার্যকলাপ যারা ভূতুড়ে বিল বানিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। গ্রামে গঞ্জে তো আরো বেহাল দশা। মিটার সংযোগ ছাড়াই অনেককে দিনের পর দিন বিল গুণতে হচ্ছে।

মিটার টেম্পারিং এর তথাকথিত অভিযোগে মামলার হুমকি দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। মিটারের আবেদন করলে মাসের পরে মাস চলে যায় কিন্তু খবর থাকেনা।

যদি ২-৩ লাখ টাকা দিতে পারেন সেটা পাবেন অনায়াসেই। এটাই কিন্তু রিয়েলিস্টিক ফ্যাক্ট।

এই সব সমস্যা মোকাবেলায় আমাদের নিজেদের সচেতনা অবলম্বন করতে হবে। আমরা যে ধরনের বৈদ্যুতিক এনার্জি মিটার ব্যবহার করছি সেটা নিয়ে ধারণা থাকতে হবে।

তাহলেই অসাধু কোম্পানিগুলো এরকম করার আগে অন্তত দশবার ভাববে। আপনার বিদ্যুৎ বিল বেশি আসছে মনে হলে সাথে সাথে বিলের কাগজের সাথে মিটারের রিডিং মিলাবেন। তখন বুঝতে পারবেন এই টাকার বিদ্যুৎ আপনি ব্যাবহার করছেন কিনা?

সাধারণত আবাসিক/ বাণিজ্যিক সিংগেল ফেজ মিটার ৩ প্রকার। যথাঃ

  • এনালগ মিটার
  • ডিজিটাল মিটার
  • ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার

এনালগ মিটার

এনালগ মিটার বলতে পুরানো দিনের মিটারগুলোকে বুঝানো হচ্ছে। যে সমস্ত মিটার দাগাঙ্কিত স্কেলের উপর পয়েন্টারের ডিফ্লেকশন দ্বারা আপনার ব্যবহৃত এনার্জির পরিমাণ নির্দেশ করে তাদের এনালগ মিটার বলে। এ ধরনের মিটারে কোন ডিজিটাল ডিসপ্লে থাকবেনা।

এটার রিডিং মিলাতে অনেকেরই সমস্যা হয়ে থাকে। এনালগ মিটারে ৬ ডিজিটের ঘর বিদ্যমান এবং ডান সাইডে একটি লাল মার্কিং থাকে।

এটা ১ ইউনিটের দশ ভাগের এক ভাগ তাই এটা রিডিং হিসাবে ধরা হয় না যেমন অনেকটা ঘড়ির সেকেন্ডের কাটার মত।

কত ঘন্টা কত মিনিট বললেও কত সেকেন্ড কেউ বলে না, এটাও ঠিক তাই। তাই আপনার বাম সাইডের দাগগুলোই আপনার মিটারের রিডিং।

বিল

 

ডিজিটাল এনার্জি মিটার

এই মিটারের ক্যাসিও ঘড়ির মত লেখা উঠে অনেকে জানেন। এই মিটারে লেখা বার বার পরিবর্তন হয়, তাই আমরা সবাই বুঝতে পারি না কোন লেখাটি রিডিং। লেখার ডান সাইডে kwh দ্বারা যে লেখা আসে এগুলো হচ্ছে রিডিং।

আবার কোন মিটারে kwh দুই বার আসে একবার কম আবার বেশি। বেশিটা হচ্ছে আপনার চলতি মাসের বর্তমান রিডিং। কমটা হচ্ছে পূর্ববর্তী মাসের রিডিং।

 

বিল

 

প্রিপেইড এনার্জি মিটার

এই ধরনের মিটারের ডিসপ্লে সিস্টেম ডিজিটাল মিটারের মতই। কিন্তু এই মিটারে অগ্রিম টাকা রিচার্জ করলেই আপনার জন্য এনার্জি বরাদ্দ হবে। আর এই প্রক্রিয়াটি অন্য একটি আর্টিকেলেও আপনাদের সাথে আলাপ হয়েছিল।

বিলিং এ কারচূপি বা ভূল হয়েছে কিনা কিভাবে বুঝব?

এবার আসি বিলের কাগজে সবারই বিলে লেখা আছে আগের রিডিং মানে গত মাসে আপনাকে কত রিডিং পর্যন্ত বিল দেয়া হয়েছিল এবং নিচে লেখা আছে বর্তমান রিডিং মানে এইমাসে কত রিডিং নিয়ে আপনাকে বিল তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। কাগজ হাতে পেয়ে মিটারের সাথে মিলিয়ে দেখবেন রিডিং কত?

সেটি বিলের কাগজ থেকে বেশি হওয়ার কথা কেননা বিলের কাগজ আপনার কাছে আসার ৫/৭ দিন পূর্বে রিডিং নেওয়া হয় যদি রিডিং কিছু বেশি হয় তাহলে বুঝবেন বিলের হিসেবটি সঠিক আর যদি সমান সমান হয় তাহলে বুঝবেন রিডিং নেওয়ার সময় কিছু বেশি নিয়েছিল।

তাই নেওয়ার পর বিলের কাগজ আসা পর্যন্ত আপনার এই রিডিং ব্যবহার হয়ে গেছে, পরবর্তী মাসে এই রিডিং বাদ দিয়ে বিল হবে।

আপনি যদি দেখেন বিলের কাগজ থেকে অনেক বেশি রিডিং তাহলে বুঝবেন নিশ্চয় ভুলে কিংবা না দেখে বা দেখেও বেশি নিতে পারে।

তখন আপনি বিলের কাগজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিস/সদর দপ্তর/জোনাল অফিস/সাব জোনাল অফিসের বিলিং সুপার ভাইজারের সাথে যোগাযোগ করবেন।

তবে বিলিং সুপারভাইজার ছাড়া অন্য কোথাও যোগাযোগ করলে সবাই বিলিং সুপারভাইজারের কাছেই পাঠায়। আপনি সংশ্লিষ্ট অফিসের ওয়েবসাইট থেকে বিলিং সুপারভাইজারের নাম্বার সংগ্রহ করবেন।

তাই আপনার বাড়ির মিটারটির রিডিং এর সাথে আপনার বিলের কাগজটির সামঞ্জস্যতা করে পদক্ষেপ নিন। নিজে সচেতন থাকুন এবং ভূতুড়ে বিল থেকে মুক্তি পান। আজকের এই আর্টিকেলটি মূলত সকলকে সচেতন করার উদ্দেশ্যেই লিখা। কারণ বর্তমানে ভূতুড়ে বিল আতংকের আরেক নাম।

You may also like...