ওহমের সূত্র এবং এই সূত্রের অদেখা কিছু প্রশ্ন

ওহমের সূত্র জানেনা বিজ্ঞান বিভাগের এমন ছাত্র খুঁজে পাওয়া রীতিমত অসম্ভব। কিন্তু কোন কিছু জানার গভীরতা সবার এক নয়। কেউ শুধু পরীক্ষা পাসের জন্য ফর্মুলা মুখস্ত করে আর কেউ সূত্রটিকে গভীরভাবে গবেষণা করে।

Ohm's formula and some unseen questions from this formula

প্রথমে জেনে নেওয়া যাক ওহমের সূত্র কি বলে।

ওহমের সূত্র [Ohm’s Law]:-

1826 খ্রিস্টাব্দে জার্মান বিজ্ঞানী জর্জ সাইমন ওহম প্রবাহমাত্রা ও বিভব-প্রভেদের মধ্যে সম্পর্ক একটি সূত্রের আকারে প্রকাশ  করেন । সূত্রটি ওহমের সুত্র নামে পরিচিত । সূত্রটি হল— উষ্ণতা ও অন্যান্য ভৌত অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে, কোনো পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহমাত্রা ওই পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব-প্রভেদের সমানুপাতিক হয় । ভৌত অবস্থা বলতে পরিবাহীর উপাদান, ঘনত্ব, দৈর্ঘ্য, প্রস্থচ্ছেদ ইত্যাদি বোঝায় ।

আজকে ওহমের সূত্র নিয়ে এমন কিছু প্রশ্ন আলোচনা করব যা হয়তো আগে ভাবা হয়নি কিংবা প্রশ্ন মনে জাগলেও মনের মত উত্তর পাওয়া হয়নি। চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।

E = IR এবং V = IR কি একই জিনিস?

অনেকেই E = IR এবং V = IR সূত্র দুটি গুলিয়ে ফেলি। আসলে দুটি ফর্মূলায় ভিন্নতা আছে। E হচ্ছে সোর্সের ভোল্টেজ আর V হচ্ছে সার্কিট এর রোধসমূহে ভাগ হয়ে যাওয়া ভোল্টেজ।

E = IR সূত্রের মাধ্যমে সোর্স ভোল্টেজ পেতে হলে সার্কিটের মোট কারেন্ট তার মোট রোধ দিয়ে গুণ করতে হবে।

V = IR সূত্রের মাধ্যমে নিদিষ্ট কোন রোধে ভাগ হওয়া ভোল্টেজ পেতে হলে ঐ রোধের মধ্যে প্রবাহিত কারেন্ট এবং সংশ্লিষ্ট রোধের মান দিয়ে গুণ করতে হবে। E মূলত E.M.F এর সংক্ষিপ্ত রুপ। যার পূর্ণরূপ হল Electromotive Force।

Ohm's formula

E.M.F বলতে কি বুঝায়?

ই.এম.এফ হচ্ছে ইলেকট্রোমোটিভ ফোর্স। অর্থাৎ যে শক্তি বা চাপের প্রভাবে কোন পরিবাহীর ইলেকট্রন সমূহ চলাচল করতে থাকে বা চলাচল করার প্রয়াস পায় তাকে ই.এম.এফ বলা হয়।

এর একক হচ্ছে ভোল্ট।

ওহমের সূত্রে তাপমাত্রা ফিক্স থাকাটা জরুরি কেন?

ওহমের সূত্র পরীক্ষাগারে প্রমাণ করতে গেলে তাপমাত্রা ফিক্স রাখাটা আবশ্যক। কারণ, এ সূত্র থেকে আমরা জানি, কোন পরিবাহীতে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহের পরিমাণ তার ভোল্টেজের সমানুপাতিক।

তাহলে লিখা যায়,

I = GV [যেখানে G হল পরিবাহিতা এবং একটি ধ্রুবক]

আর পরিবাহিতা হল রোধের বিপরীত রাশি। অর্থাৎ,

G = 1/R

তাহলে প্রদত্ত রাশিমালা দাঁড়ায়,

I = V/R

বা, V = IR

বা, V/I = R

অর্থাৎ, ভোল্টেজ এবং কারেন্ট যাই হোক না কেন তাদের রেশিও সর্বদাই পরিবাহীর রোধের সমান হবে। এখন চিন্তা করেন যদি তাপমাত্রা পরিবর্তিত হয় তাহলে রোধও কিন্তু ফিক্স থাকবেনা। রোধও পরিবর্তিত হবে। কারণ, আমরা জানি তাপমাত্রার সাথে রোধের খুব মধুর সম্পর্ক বিদ্যমান। তখন ভোল্টেজ এবং কারেন্টের রেশিও মূল R এর সমান থাকবেনা। তাই তাপমাত্রা পরিবর্তিত হলে এই সূত্র প্রমাণ হবেনা।

ওহমের সূত্র এসি সার্কিটের জন্য প্রযোজ্য হবে কি?

এই সূত্রের প্রথম শর্তই হল তাপমাত্রা স্থির থাকা। আর এসি হল পরিবর্তনশীল প্রবাহ। এতে তাপমাত্রার যথেষ্ট উঠানামা পরিলক্ষিত হয়। আর তাপমাত্রার সাথে সাথে ইন্ডাক্টিভ, ক্যাপাসিটিভ রিয়েক্টেন্সের এবং রোধের ব্যাপক পরিবর্তন হয়। তাই এসি প্রবাহের জন্য ওহমের সূত্র প্রযোজ্য হবে না।

Ohm's circuit

ওহমের সূত্র থাকতে আমরা VDR(Voltage divider rule) এবং CDR(Current Divider Rule) ব্যবহার করি কেন?

ওহমের সূত্র সরল বর্তনীগুলোতে প্রয়োগ করা যায়। কিন্তু জটিল বা বহুশাখা এবং লুপবিশিষ্ট সার্কিটে এই সূত্র প্রয়োগ করা যায়না। তাই এক্ষেত্রে কারেন্ট এবং ভোল্টেজ বের করতে হলে কারেন্ট ডিভাইডার রুল এবং ভোল্টেজ ডিভাইডার রুল ব্যবহার করতে হয়।

ওহমের সূত্র ট্রান্সফরমারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় কেন?

আমরা জানি, এই সূত্র কেবল নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ডিসি সোর্সযুক্ত রেজিস্টিভ লোডের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

ট্রান্সফরমার ইন্ডাক্টিভ লোড। এই ডিভাইসের অপারেশনের জন্য এসি দরকার। তাই এই ডিভাইসে তাপমাত্রার যথেষ্ট পরিবর্তন ঘটে। তাই ট্রান্সফরমার এই সূত্র মেনে চলেনা।

Transformer pic

সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধ পরিবাহীর ক্ষেত্রে কি এই সূত্র প্রযোজ্য হবে?

যদি তাপমাত্রা নির্দিষ্ট রাখা হয় তাহলে সেমিকন্ডাক্টরের ক্ষেত্রেও এই সূত্রটি প্রযোজ্য হবে। আমরা ল্যাবে যে কালার কোড রেজিস্টর দিয়ে ওহমের সূত্র যাচাই করেছি সেই কালার কোড রেজিস্টরের কিন্তু অর্ধ-পরিবাহী বা সিলিকন কার্বাইড (SiC) দিয়ে তৈরি।

si

 

You may also like...

Leave a Reply