সাবস্টেশন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

সাবস্টেশন পাওয়ার সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বৈদ্যুতিক পাওয়ার পরিবহন ও বিতরণের ক্ষেত্রে
সাবস্টেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমান যুগে অল্টারনেটিং কারেন্ট (এসি) বৈদ্যুতিক পাওয়ার উৎপাদন করে
পরিবহন ও বিতরণ করা হচ্ছে। বৈদ্যুতিক পাওয়ার উৎপাদনে বিভিন্ন সুবিধার্থে লােড প্রান্ত থেকে দূরে পাওয়ার
উৎপাদন কেন্দ্র অবস্থিত। বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনীয় ভোল্টেজ বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সমন্বয়ে
বিদ্যুৎ বিতরণের যে স্টেশন তাই সাবস্টেশন নামে পরিচিত। ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা যন্ত্রপাতির ধরণ, অবস্থান।
অনুযায়ী সাবস্টেশনকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। আলােচ্য অধ্যায়ে সাবস্টেশনের কাজ, যন্ত্রপাতি এবং
সেগুলোর অপারেশন সম্পর্কে আলোচনা করা আছে।
সাবস্টেশন বা বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র হল কতকগুলাে প্রয়ােজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের সংযোগস্থল যেগুলাের মাধ্যমে
বৈদ্যুতিক পাওয়ারের কিছু বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও গ্রাহকের।
মাঝখানে সাবস্টেশন একটি মাধ্যমিক স্টেশন যা বৈদ্যুতিক পাওয়ার পরিবহন (ট্রান্সমিশন) ও বিতরণে
(ডিস্ট্রিবিউশন) মূলত এসি ভােল্টেজের পরিবর্তনে কাজ করে। সাবস্টেশনের মাধ্যমে প্রয়ােজন অনুসারে কম (লাে)
ভোল্টেজকে বেশি (হাই) ভোল্টেজ এবং হাই ভোল্টেজকে লাে ভোল্টেজ পরিবর্তন করে বিদ্যুৎ পরিবহন
ট্রান্সমিশন) ও বিতরণ (ডিস্ট্রিবিউশন) করা হয়।
একটি সাবস্টেশনের অবস্থান, ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির নির্ভরযোগ্যতা ও অপারেশন-এর উপর বিদ্যুৎ ব্যবস্থার।
নিরবচ্ছিন্নতা নির্ভর করে। 

 

নিচে ১১/০.৪ কেভি সাবস্টেশনের সিঙ্গেল লাইন ডায়াগ্রাম দেখানাে হল।
 
সাবস্টেশন
 
সাব স্টেশনের কাজঃ  বিভিন্ন সুবিধার জন্য লোড প্রান্ত থেকে অনেক দূরে বৈদ্যুতিক পাওয়ার উৎপাদন কেন্দ্র বা
বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র অবস্থিত। এ কারণগুলাের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জ্বালানির প্রাপ্যতা। সিস্টেমের পাওয়ার লস বা।
অপচয় কমিয়ে বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনীয় ভোল্টেজে বিদ্যুৎ সরবরাহ করাই সাবস্টেশন কাজ। সাবস্টেশন।
পাওয়ার সিস্টেমের একটি গুরত্বপূর্ণ অংশ। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের উৎপাদিত ভােল্টেজ এর মান বৃদ্ধি করে
ট্রান্সমিশন (পরিবহন) লাইনের মাধ্যমে দূরবর্তী স্থানে প্রেরণ এবং আবার প্রয়োজনে উচ্চ ভােল্টেজকে ব্যবহার।
উপযােগী ভােল্টেজে পরিবর্তন করাই সাবস্টেশনের প্রধান কাজ। এ কাজের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বা সুইচ গিয়ার।
বসানো থাকে। এ কাজের অন্যতম বৈদ্যুতিক মেশিন হলে ট্রান্সফরমার।
সাবস্টেশনের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক পাওয়ারের কন্ট্রোল, রেগুলেটিং, ট্রান্সফরমার ও ডিভাইডিং ইত্যাদি করা হয়।
এছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবহার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সার্জ এ্যাবজরভার, লাইটনিং অ্যারেস্টার ইত্যাদি রক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার।
করা হয়।
 
সাবস্টেশনের যন্ত্রপাতি (Equipment of substation) : বিদ্যুৎ ব্যবস্থার সুস্থ কন্ট্রোল, মেরামত ও
রক্ষণাবেক্ষণ, রেগুলেটিং এর জন্য যে সমস্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়, সেগুলাের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলঃ
১. বাসবার। 
২. সার্কিট ব্রেকার 
৩. লাইটনিং অ্যারেস্টার 
৪. আইসোলেটর
৫. ট্রান্সফরমার
৬. ইস্টুমেন্ট ট্রান্সফরমার
৭. ইনসুলেটর
৮. কন্ট্রোল প্যানেল
৯. আর্থিং সিস্টেম
১০. আগুন নেভানোর যন্ত্র
১১. সার্জ অ্যাবজরবার
১২. ক্যাবল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য
 
সাবস্টেশনের যন্ত্রপাতি অপারেটিং : বিদ্যুৎ ব্যবহার সুষ্ঠু কন্ট্রোল, রেগুলেটর, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য, যে
শমত এত ব্যবহার করা হয় সেগুলাের সঠিক অপারেশন করতে না পারলে বিদ্যুৎ ব্যবহারে বিপর্যয় দেখা
দেয়াসহ প্রাণহানির সম্ভাবনা থাকে। এ সকল যন্ত্রপাতির অপারেশনের নিয়ম জানলে এবং তা মেনে অপারেট/চালনা
করলে জীবনহানির মতাে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কম ঘটবে।
সাবস্টেশনে যে সমস্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়, সেগুলাের অপারেশন বা চালনা নিচে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল
 
১. বসিবার (Busber) : এটি কতকগুলাে মােটা তামা বা অ্যালুমিনিয়াম পাত যেগুলাে নাট বােল্টের মাধ্যমে
শক্তভাবে আটকানাে থাকে। বাসবার সার্কিট হতে বৈদ্যুতিক পাওয়ার বা এনার্জি সংগ্রহ ও বিতরণ করে।
 
২. সার্কিট ব্রেকার (Circuit breaker) : যে কোন ত্রুটিপূর্ণ সার্কিটে যখন মাত্রাতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহিত হয়,
তখন রিলের মাধ্যমে সার্কিট ব্রেকার সাপ্লাই থেকে অটোমেটিকভাবে বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সার্কিট বিচ্ছিন্ন করে। আবার
হাতের মাধ্যমে এটি অপারেট করা যায়।
 
৩. লাইটনিং অ্যারেস্টার (Lightning arrester) : লাইটনিং বা বজ্রপাতের ফলে লাইনে যে হাই ভােন্টেজের
সৃষ্টি হয় তা থেকে বৈদ্যুতিক লাইন, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম রক্ষার জন্য যে ডিভাইস ব্যবহার করা হয়, তাই।
লাইটনিং অ্যারেস্টার। এটি অটোমেটিকভাবে বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে। সাব স্টেশনে প্রটেকটিভ ডিভাইসের
মধ্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
 
৪. আইসোলেটর (Isolator) : এটি হচ্ছে মেকানিক্যাল সুইচ পদ্ধতি যাকে বিনা লােডে অফ-অন করা হয়। লাইনে
সংযুক্ত সার্কিট ব্রেকার অপারেশনের পর আইসোলেটর অপারেটিং করতে হয়। অর্থাৎ লােডবিহীন অবস্থায় এটি অপারেট
করতে হয়। নিরাপদ ভাবে বৈদ্যুতিক লাইনের কাজ করতে আইসােলেটরের গুরুত্ব অধিক।
 
৫. ট্রান্সফরমার (Transformer) : এটি সাবস্টেশন ব্যবহৃত অন্যতম ডিভাইস বা ইলেকট্রিক্যাল মেশিন। এর মাধ্যমে
সাব স্টেনের মূল কার্যক্রম ঘটে। অর্থাৎ সিস্টেমের ভােল্টেজ বাড়ানাে ও কমানাের কাজ ট্রান্সফরমারই করে। সাবস্টেশনের
প্রধান অংশ ট্রান্সফরমারের কার্যক্রম সঠিকভাবে করার জন্যই অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়। এটির রুটিন রক্ষণাবেক্ষণ
খুব গুরুত্বের সাথে করা উচিত।
 
৬. ইন্সট্রুমেন্ট ট্রান্সফরমার (Instrument transformer) : লাে রেঞ্জের মিটার দিয়ে হাই বা উচ্চ ভােল্টেজ ও কারেন্ট।
পরিমাপ করতে এবং কন্ট্রোলিং ডিভাইসসমূহের অপারেশনের জন্য ইন্সট্রুমেন্ট ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা হয়। কারেন্ট
পরিমাপ কারেন্ট ট্রান্সফরমার (সিটি) এবং ভোল্টেজ পরিমাপ পটেনশিয়াল ট্রান্সফরমার (পিটি) ব্যবহার করা হয়।
 
৭. ইনসুলেটর (Insulator) : সাব স্টেশনের সুইচ গিয়ার, বাসবার , ট্রান্সফরমার সঠিকভাবে সংযোগের জন্য চীনা মাটির
তৈরি ব্যবহৃত উপাদানই ইনসুলেটর।।
 
৮. কন্ট্রোল প্যানেল (Control panel) : সিস্টেমের অটোমেটিক অপারেশনের জন্য যে প্যানেল বাের্ড, মিটারসমূহ রিলে।
যুক্ত থাকে সেটাই কন্ট্রোল প্যানেল। কন্ট্রোলপ্যানেল থেকেই সিস্টেম কন্ট্রোল করা হয়।
 
৯. আধং সিস্টেম (Earthing system) : সাবস্টেশনে ব্যবহৃত ট্রান্সফরমার, সুইচ গিয়ার, বাসবার ইত্যাদি নিয়ম।
মােতাবেক গ্রাউন্ড বা আর্থিং করা থাকে। এটি নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
 
১০. সার্জিও অ্যাবজরবার (Surge absorber) : সার্জ ভোল্টেজ-এর প্রতিক্রিয়া নিরাপদভাবে আর্থিং করতে এটি কাজ
করে।
 
১১. আগুন নিভানাের যন্ত্র (Fire Extinguisher) : বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট বা কোন কারণে আগুন লেগে যেন দুর্ঘটনা না
ঘটে তার জন্য আগুন নেভানোর যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।

You may also like...

Leave a Reply