ট্রান্সফরমার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা

ট্রান্সফরমার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা

ট্রান্সফারমার একটি স্থির বৈদ্যুতিক মেশিন যা ফ্রিকোয়েন্সি অপরিবর্তিত রেখে সম পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্ত। ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ইন্ডাকশন এর মাধ্যমে এক বর্তনী হতে অন্য বর্তনীর স্থানান্তর করে। উভয় বর্তনীর একটি। সাধারণ ম্যাগনেটিক বর্তনী থাকে।

ট্রান্সফরমার যে বর্তনী সাপ্লাই এর সাথে সংযুক্ত থাকে, তাকে প্রাইমারি এবং যে বর্তনী হতে লোডে বিদ্যুৎ শক্তি। সাপ্লাই দেওয়া হয়, তাকে সেকেন্ডারি বলে। প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি সুপার এনামেল ইনসুলেশন যুক্ত তামার তারের কয়েল বিশেষ। দুটি বর্তনীর কয়েলের মধ্যে একটি সাধারণ ম্যাগনেটিক বর্তনী সৃষ্টির জন্য এদেরকে। একটি ইস্পাতের ফ্রেমে জড়ানো হয়। ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি কয়েল একটি নির্দিষ্ট ভােল্টেজে বিদ্যুৎ শক্তি গ্রহণ। করে এবং সেকেন্ডারি কয়েল হতে অন্য ভোল্টেজে বিদ্যুৎ শক্তি লোডে সরবরাহ করা হয়।

ট্রান্সফরমারের গঠন: ট্রান্সফরমারের প্রধান অংশ দুটি। যথা- (ক) ট্রান্সফরমার কোর; (খ) ট্রান্সফরমার কয়েল।

ট্রান্সফরমার কোর : সিলিকন স্টিলের পাতলা সিট বা পাত কেটে কোর তৈরি করা হয়। প্রত্যেকটি কোরকে ভালোভাবে বার্নিশ দেওয়া হয়। ফলে তারা পরস্পর থেকে বৈদ্যুতিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকে। অনেকগুলো কোর একত্রে ন্থাপন করে একটি ফ্রেম করা হয়। এই ফ্রেমটি প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি কয়েলের মধ্যে ম্যাগনেটিক বর্তনী হিসেবে কাজ করে।

ট্রান্সফরমার কয়েল : সুপার এনামেল তার দ্বারা কয়েল তৈরি করে কোরের উপর বসিয়ে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি কম হয়। প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি ওয়াইন্ডিং-এর মধ্যে বৈদ্যুতিকভাবে কোনো সংযোগ নেই। তবে কোর্টের মাধ্যমে যান্ত্রিক ভাবে সংযোগ করা হয়। বড় বড় ট্রান্সফরমার কোর, কয়েল ছাড়া আরও কিছু আনুষঙ্গিক অংশ থাকে। যেমন – (১) ট্রান্সফরমার ট্যাংক; (২) বুশিং; (৩) কনজারভেটর; (৪) ব্রিদার; (৫) টেপ চেঞ্জিং গিয়ার ; (৬) বিস্ফোরণ বেন্ড বা এক্সপ্রেশন বেন্ড।

আলফরমার সংকঃ এটা ইস্পাতের তৈরি একটি বাক্স বিশেষ। এই ট্যাংকের মধ্যে মূল ট্রান্সফরমারটি স্থাপন। করে সম্পূর্ণ ট্যাংকটি বিশেষ ধরনের তেল দ্বারা ভর্তি করা হয়। এই তেলকে সাধারণভাবে ট্রান্সফরমার তেল বলা হয়। এই তেল ট্রান্সফরমারকে ঠান্ডা রাখে এবং কয়েলের ইনসুলেশন হিসাবে কাজ করে।

বুশিং: বুশিং চীনা মাটির তৈরি এবং এর আকার ইনসুলেটর গুচ্ছের মতো। এর কেন্দ্রস্থল দিয়ে একটি তামার। দঙ থাকে এবং দণ্ডের উভয় প্রান্ত খোলা থাকে। ট্যাংকের উপরিভাগে বুশিং আটকানো হয়। তামার দণ্ডের নিচের প্রান্তের ট্রান্সফরমার টার্মিনাল এবং উপরের প্রান্তে লাইন সংযোগ করা হয়। উচ্চ ভোল্টেজ দিকের বুশিং লম্বা এবং নিম্ন ভোল্টেজ দিকের বুশিং খাটো হয়ে থাকে।

কনজারভেটর : এটা ইস্পাতের তৈরি একটি ড্রাম বিশেষ। একটি পাইপ দ্বারা এর নিচের দিক হতে ট্রান্সফরমার ট্যাংকের সাথে সংযুক্ত থাকে। এই ড্রামের এক পাশে ব্রিদার সংযুক্ত থাকে। তেল ভর্তির জন্য কনজারভেটরের উপরিভাগে একটি মুখ এবং এক পাশে তেলের উপরিতল দেখার জন্য একটি কাচের নির্দেশ থাকে।

বিদার: বিদার হচ্ছে সিলিকা জেলের দানা ভর্তি একটি কাচের পাইপ বিশেষ। এর এক প্রান্ত কনজারভেটরে সংযুক্ত থাকে এবং অপর প্রান্ত খোলা থাকে। এর মাধ্যমে ট্রান্সফরমার ব্রিদিং এর কাজ চালায়।

টেপ চেঞ্জিং গিয়ার: ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি কয়েলে সাপ্লাই ভোল্টেজ অনেক সময় কম বেশি হয়। ফলে সেকেন্ডারি কয়েলের তার প্রভাব পড়ে। ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি সাইডে ভোল্টেজ ঠিক রাখার জন্য উভয় কয়েলের প্রান্তে কিছু প্যাচ সংবলিত টেপ ব্যবহার করা হয়। এই টেপের সংযোগ। পরিবর্তনের জন্য ট্যাংকের ভিতরে একটি গিয়ার ব্যবস্থা থাকে। কোনো কোনো ট্রান্সফরমারে এই ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয় হয়ে থাকে।

বিস্ফোরণ বেন্ড : এটা ট্রান্সফরমার ট্যাংকের উপরে সংযুক্ত একটি লম্বা পাইপ যার উপরি ভাগ কনজারভেটরের চেয়ে এবং মাথা বাকানাে থাকে। এর মাথায় একটি পাতলা রাবারের পর্দা থাকে। কোনো কারণে ট্রান্সফরমারের অভ্যন্তরে কোনো শর্ট সার্কিটের দরুন হঠাৎ অধিক পরিমাণে গ্যাস উৎপন্ন হলে গ্যাসের চাপে পাইপের মুখের পর্দা ফেটে গ্যাস বের হয়ে যায়। ফলে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের হাত থেকে রক্ষা পায়।
ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারি কয়েলে ভোল্টেজ উৎপন্ন হওয়ার কারণ: ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি কয়েল একই সাধারণ বর্তনী দ্বারা যুক্ত থাকে।

তাই প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি উভয় কয়েল একই ফ্লাক্স ক্রিয়াশীল থাকে। যখন প্রাইমারি কয়েলে এসি সাপ্লাই প্রয়ােগ করা হয় তখন এর ভেতর দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হয় এবং ম্যাগনেটিক সার্কিট পরিবর্তনশীল ফ্লাক্স উৎপন্ন হয়। এই ফ্লাক্স পরিবর্তনের ফলে প্রাইমারি কয়েলে ভোল্টেজ (ব্যাক ই এম এফ) উৎপন্ন হয় (ফ্যারাডের সূত্র অনুসারে) এবং এই কোয়েল সারাখয়র স ইন্ডাকট্যান্স হিসাবে কাজ করে। প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি উভয় কয়েল একই সাধারণ চুম্বক বর্ত থাকায় প্রাইমারি কয়েল কর্তৃক উৎপন্ন ফ্লাক্স সেকেন্ডারি কয়েলে সংযুক্ত হয়।

প্রাইমারি কয়েল দ্বারা পরিবর্তনশীল হওয়ায় এর মান প্রতি মুহূতেই পরিবর্তন হয়। সেকেন্ডারি কয়েল কর্তৃক এই ফ্লাহু তাতেও ভোল্টেজ উৎপন্ন হয়। এই মিউচুয়েল ফ্লাক্স এর ফ্রিকোয়েন্সি সাপ্লাই ফ্রিকোয়েন্সি সমান। কয়েল উৎপন্ন ভোল্টেজের ফ্রিকোয়েন্সি মিউচুয়েল ফ্লাক্সের ফ্রিকোয়েন্সি সমান। সুতরাং সে উৎপন্ন ভোল্টেজের ফ্রিকোয়েন্সি সাপ্লাই ফ্রিকোয়েন্সি সমান।
ট্রান্সফরমারের শ্রেণিবিভাগ:

গঠন অনুযায়ী ট্রান্সফরমার চার প্রকার। যথা –
(ক) কোর টাইপ ট্রান্সফরমার
(খ) শেল টাইপ টান্সফরমার
(গ) রিবন টাইপ ট্রান্সফরমার
(ঘ) স্পাইরাল টাইপ ট্রান্সফরমার

প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি ভোল্টেজ অনুপাত অনুযায়ী ট্রান্সফরমার দুই প্রকার। যথা –
(ক) স্টেপ আপ ট্রান্সফরমার; (খ) স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমার।

সাপ্লাই সিস্টেম এর ফেস অনুযায়ী ট্রান্সফরমার দুই প্রকার। যথা –
(১) সিঙ্গেল ফেজ ট্রান্সফরমার; (২) প্র ফেজ ট্রান্সফরমার।
সার্ভিস কর্মসম্পাদন অনুযায়ী ট্রান্সফরমার তিন প্রকার। যথা –
(১) পাওয়ার ট্রান্সফরমার; (২) ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার; (৩) ইন্সট্রোমেন্ট ট্রান্সফরমার।

স্থাপনা অনুযায়ী ট্রান্সফরমার আবার তিন প্রকার। যথা – (ক) ইনডোর টাইপ ট্রান্সফরমার, (খ) আউট ডোর টাইপ ট্রান্সফরমার, (গ) পোল মাউন্টেড ট্রান্সফরমার। ইলট্রেমেন্ট ট্রান্সফরমার আবার দুই প্রকার। যথা – (ক) কারেন্ট ট্রান্সফরমার, (খ) পটেনশিয়াল ট্রান্সফরমার।

স্টেপ আপ ও স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমার:

স্টেপ আপ ট্রান্সফরমার: যে ট্রান্সফরমার এর প্রাইমারিতে কম ভােল্টেজ সাপ্লাই দিয়ে সেকেন্ডারিতে বেশি যায়, তাকে স্টেপ আপ ট্রান্সফরমার বলে। ট্রান্সমিশন লাইনের শুরুতে এই জাতীয় ট্রান্সফরমার ব্যবহার ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি চেয়ে সেকেন্ডারি প্যাচ সংখ্যা বেশি। স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমার: এই ট্রান্সফরমারের প্রাইমারিতে বেশি ভোল্টজ সাপ্লাই দেওয়া হয় এবং সেকেন্ডারিতে কম ভোল্টেজ পাওয়া যায়। এই জাতীয় ট্রান্সফরমার সাধারণত ট্রান্সমিশন লাইনের শেষ প্রান্তে এবং বিভিন্ন যন্ত্রপাতিতে ব্যবহার করা হয়। এর সেকেন্ডারির চেয়ে প্রাইমারিতে প্যাচ সংখ্যা বেশি।

এপিফমারের নেমপ্লেট রেটিং:
ট্রান্সফরমারের রেটিং বলতে তার পাওয়ার পরিবহনের ক্ষমতাকে বুঝায়। একটি ট্রান্সফরমার প্রাইমারি সার্কিট, থেকে যে পরিমাণ পাওয়ার তার সেকেন্ডারি সার্কিটে স্থানান্তর করতে পারে, তাকে ঐ ট্রান্সফরমারের নেমপ্লেট। রেটিং বলে। ট্রান্সফরমার নেমপ্লেট রেটিং সাধারণত ভোল্ট অ্যাম্পিয়ার (VA), রিলেভেন্ট অ্যাম্পিয়ার | (KVA), অথবা মেগাভােল্ট অ্যাম্পিয়ার (MVA) হিসেবে প্রকাশ করা হয়।

ট্রান্সফরমারের কুলিং পদ্ধতি:
ট্রান্সফরমার কুলিং-এর জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতি গুলোর নাম
১. প্রাকৃতিক কুলিং বা প্রাকৃতিক এয়ার কুলিং;
২. স্বাভাবিক অয়েল কুলিং;
৩. তেলে নিমজ্জিত চাপযুক্ত এয়ার কুলিং;
৪. তেলে নিমজ্জিত চাপযুক্ত ওয়াটার কুলিং;
৫. তেলে চাপযুক্ত অয়েল কুলিং;
৬. চাপযুক্ত এয়ার কুলিং।

ট্রান্সফরমারের লসসমূহ: একটি ট্রান্সফরমার যে পরিমাণ বৈদ্যুতিক শক্তি গ্রহণ করে তার সবটুকু লোডে সাপ্লাই দিতে পারে না। কিছু শক্তি তার কোর ও কয়েলে ব্যয় হয় যা উত্তাপ সৃষ্টি করে। এই ব্যয়িত শক্তিকে ট্রান্সফরমারের লস বলা হয়।

ট্রান্সফরমারের লস গুলো নিম্নরূপ :
(১) কোর লস
(২) কপার লস।

কোর লস আবার দুই প্রকার:
(ক) হিসটেরিসিস লস।
(খ) এডি কারেন্ট লস।

ই.এম.এফ সমীকরন

You may also like...

Leave a Reply