ইলেকট্রিক ব্লেন্ডারের কার্যপ্রণালী

ইলেকট্রিক ব্লেন্ডার
হোম ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্সেস হিসেবে ইলেকট্রিক ব্লেন্ডার বা মিক্সার একটি জনপ্রিয় ইকুইপমেন্ট। এ মেশিন ফল, মাংস,
মসলা ইত্যাদি গ্রাইন্ডিং করে থাকে। তা ছাড়া এ মেশিনে শরবত, লাচ্ছি, ফলের রস, কফি, চাটনি, ক্রিম ইত্যাদি লােভ পানীয়
খাদ্য তৈরি করতে পারে। ব্লেন্ডার বা মিক্সচার মেশিন এর বডি সাধারণত প্লাস্টিকের হয়ে থাকে, অপারেটিং সুইচ ও উপর এক
সাইডে বসানাে থাকে। মিক্সচার মেশিন প্রধানত দুই প্রকার, যথা: (১) ব্লেন্ডার (২) গ্রাইন্ডার।
ব্লেন্ডারের মূল কার্যনীতি: 
ইলেকট্রিক ব্লেন্ডার মূলত একটি ইউনির্ভাসাল মােটর, যা AC/DC সরবরাহে কাজ করতে পারে। এ মােটরের গতিবেগ অত্যন্ত
১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ আর.পি.এম.-এর মতাে। এ মােটর অন অবস্থায় দুই মিনিটের বেশি একটানা চালানো, উচিত। কারণ,
মমটির পুড়ে যেতে পারে। তবে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে যে সমস্ত মােটর ব্যবহার করা হয়, তা সর্বক্ষণ চললেও অসুবিধা হয় মোটর
অ্যাসেম্বলি এমন ভাবে থাকে, যাতে এর শ্যাফট ঊর্ধ্বমুখী উল্লম্বভাবে থাকতে পারে। ব্লেন্ডারে দুটি Bowl বা পাত্র মাটির নিচের
পাত্রের সাথে সংযুক্ত থাকে। উর্ধ্বগামী শ্যাফটে ধারালো ব্লেড সংযুক্ত করা থাকে। উপরের পাত্রে তরল রস । নিচের পাত্রে যথা
নিয়মে লাগাতে হয়। নিচের পাত্রে মোটর শ্যাফট সহ এমন ভাবে লিক প্রফভাবে সংযুক্ত থাকে, যাতে. উপর। তরল পদার্থ
ঢাললেও মোটরের শান্ট বেয়ে নিচের পাত্রে আসতে পারে না। উপরের পাত্রটি স্বচ্ছ মােটা প্লাস্টিক বা গ্লাসের তৈরি এবং
নিচের পাত্রে ঘুরিয়ে (ডান বা বামদিকে) কাপলিং করে আটকাতে হয়। উপরের পাত্রে একটি টপ কভার থাকে, যা খুলে পাত্রে
মিক্সার ম্যাটেরিয়াল ঢালা যায়।  কার্যপ্রণালি ও ব্লেন্ডারের টপ কভার খুলে বিভিন্ন ধরনের ফল বা তরলজাতীয় খাদ্যদ্রব্য অথবা
গ্রাইন্ডিং এর জন্য মসলা, কিমার মাংস ইত্যাদি উপর পাত্রে ঢালা হয়। সাপ্লাই প্লাগ সকেট সংযোগ দিয়ে ব্লেন্ডারের সুইচ অন
করলে শ্যাফট ব্লেডসহ মােটর সবেগে ঘুরতে থাকে। এত স্পিডে ঘুরতে থাকে যে দুই-এক মিনিটের মধ্যে সব কিছু মিক্সিং হয়ে
যায়। অনেক সময় হাই এবং লাে-স্পিড এর ব্যবস্থা থাকে। যে কোন স্পিডে সুইচ ২ মিনিটের বেশি রাখা হয় না। বার বার
অ-অন করে ব্লেন্ডার চালানাে হয়। সাধারণত ২/৩ (+) বারের বেশি অপারেশনের প্রয়োজন হয় না। বেশিক্ষণ সুইচ। অন করা
থাকলে মোটর পুড়ে যেতে পারে। মেশানো খাদ্যদ্রব্য বের করার জন্য সুইচ অফ করে টপ কভার বা উপরের পাত্র খুলে বের
করা হয়। শক্ত বস্তু বা মাংস ইত্যাদি গ্রাইন্ডিং করার জন্য বিশেষ ধরনের ব্লেড ব্যবহার করতে হয়। কোন অবস্থাতে ধাতব দ্রব্য
গ্রাইন্ডিং করতে দেয়া হয় না। কারণ, এতে ব্রেড এবং পাত্র উভয়েই নষ্ট হয়ে যায় । ব্লেন্ডার এর জন্য ব্যবহৃত ইউনিভার্সাল
মোটর আসলে একটি ভি,সি সিরিজ মোটর। এর বাইরের টার্মিনালে সাপ্লাই এর পোলারিটি পরিবর্তন করে দিলে মোটরের
ঘূর্ণনের দিক। কোন পরিবর্তন হয় না। কারণ, আর্মেচার ও ফিল্ডের কারেন্ট প্রবাহের দিক একই সময়ে পরিবর্তিত হয়। 
উপরের টার্মিনালে পজেটিভ (+ve) এবং নিচের টার্মিনালে নেগেটিভ (-ve) সাপ্লাই পাচ্ছে। ফলে উপরের (N-Pole) এবং নিচে
দক্ষিণ মেরু (S-pole) তৈরি হয়েছে। কাজেই আর্মেচারের উপরের দিকে অর্ধেক কন্ডাক্টর +ve এ অর্ধেক কন্ডাক্টর –ve সাপ্লাই
পেয়ে থাকে। ফ্লেমিং এর বাম হাতের সূত্র অনুযায়ী রােটর ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে ঘুরে সাপ্লাইয়ের পরবর্তী অর্ধ সাইকেলে
আর্মেচারের উপরের অর্ধেক কন্ডাক্টর -Ve এবং নিচের অর্ধেক কন্ডাক্টর #Ve সাপ্লাই পাকে অবস্থায় আর্মেচার অ্যান্টি
ক্লকওয়াইজ ঘুরবে। এ ধরনের মোটরের গতিসীমা অত্যন্ত বেশি। সাধারণত গিয়ার ট্রেইন ব্যব এ গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।
ব্লেন্ডারের বিভিন্ন অংশ:
(ক) স্টপার: এ স্টপারের মাধ্যমে (স্টপার উঠালে ছােট গােলাকৃতি ফাক হয়) মেয়ােনিজ, ক্রিম, লাচ্ছি ইত্যাদি তরল উপকরণ
ঢালা হয়। 
(খ) লিড ওপেনিং:  মোটর চালু অবস্থায় আবার পাত্রে কিছু উপকরণ যেমন বরফ কিউব ঢালার জন্য লিড ওঙ্গে ব্যবহার করা
যায়। লিড ওপেনিং ব্যবহার করতে হলে স্টপার অ্যান্টি ক্লকওয়াইজ দিকে ঘুরিয়ে লমুক্ত (Unlock) করতে হয়।
(গ) লিড: এটা হল ব্লেন্ডারের উপরের ঢাকনা। এটি আপার পাত্রের উপরের দিকে লাগাতে হয় এবং ক্লকওয়াইজ ঘুরিয়ে করে
দিতে হয়।
(ঘ) জার: ব্লেন্ডারের আপার পাত্রকে জার বলে। এতে পরিমাণ স্কেল দাগাঙ্কিত থাকে। প্রতিবার ব্যবহারের পর এ ভ
ব্লেন্ডারের বেস (নিচের পাত্র) থেকে খুলে আনতে হয়। 
(ঙ) রেড অ্যাসেম্বলি: স্টিলের তৈরি ব্লেড ইউনিট জার হােল্ডারের ভিতরে থাকে। ব্লেড অ্যাসেম্বলির  প্লাস্টিকের প্যাচযুক্ত
বেসথাকে যা জার হােল্ডারের সাথে ক্লকওয়াইজ ঘুরিয়ে (প্যাচ থাকে) ফিটিং করতে হয়।
(চ) ফিমেল কাপলিং: ব্লেড অ্যাসেম্বলির নিচে ফিমেল কাপলিং থাকে যা মেন কাপলিং, বা ড্রাইভ স্টান খাজের সাথে ফিটিং
করে ব্লেন্ডার চালিত হয়।
(ছ) সিলিং রিং বা রাবার গ্যাসকেট: ব্লেড অ্যাসেম্বলি এ রাবার গ্যাসকেট বা সিলিং রিং উপর ফিট করা থাকে। এর ফলে
কোন তরল বা পানি লিক করে মােটরে যেতে পারে না।
(জ) অ্যালুমিনিয়াম হােন্ডার ফর ব্লেন্ডার: এই হােল্ডারটি শক্ত প্লাস্টিকেরও হয়ে থাকে। মধ্যেই ব্লেড অ্যাসেম্বলি, বেস,
ফিমেল কাপলিং প্রবেশ করতে পারে। এই হােন্ডারের ভিতর ড্রাইভ স্টাড থাকে।
(ঝ) ড্রাইভ স্টার: ড্রাইভ স্টার রাবার জাতীয় পদার্থের তৈরি। একে রাবার বুশ বলা হয়। এই রাবার বুশ শ্যাফটের মাথার সাথে
লাগানো থাকে।
(ঞ) মোেটর হাউজিং: মােটর হাউজিং বা নিচের পাত্রে সম্পূর্ণ মােটর, সুইচ ইত্যাদি ফিটিং করা থাকে। মে
হাউজিং এ মােটর শ্যাট উল্লম্বভাবে থাকে। এই শ্যাফটের মাথায় রাবার বুশ ফিট করা থাকে।
(ট) কন্ট্রোল প্যানেল:  আধুনিক ব্লেন্ডারের কন্ট্রোল প্যানেলে অনেক ধরনের সুইচ ও ডিসপ্লে ইউনিট থাৎ যেমন-LCD
ডিসপ্লে, স্পিড সিলেক্টর, মিক্স বাটন, চপ বাটন, আইস ক্র্যাশ বাটন, স্টিয়ার বাটন, পালস বাটন, অন/অফ সুইচ ইত্যাদি
(ঠ) ব্লেন্ডার ফিল্টার: বর্তমানে আধুনিক ব্লেন্ডারে জুস, পানীয় ইত্যাদিকে পরিশােধনের জন্য ব্লেন্ডার ফিল ব্যবহার করা হয়। 
(ড) সাপ্লাই কর্ড: ব্লেন্ডারে সাপ্লাই দেয়ার জন্য থ্রি পিন/টু পিন সাপ্লাই কর্ড মােটর হাউজিং এর নিচের
সাইডে সংযুক্ত থাকে। 
ব্লেন্ডারে টাইমার অপারেশন: 
ব্লেন্ডার মােটর চালানাের সময় ২ মিনিটের অধিক একনাগাড়ে চালানাে হয় না। কারণ মােটর পুড়ে যেতে পারে বা যায়।
ম্যানুয়ালি (হাতে) অফ/অন নব ঘুরিয়ে বিরতি দিয়ে মােটর চালাতে হয়। অধিকাংশ ব্লেন্ডারে হাতে অফ-অন করে বিরতি
দিয়ে মােটর চালানাে হয়। সাধারণ তিন/চার বার অপারেশনে কাজ সম্পূর্ণ হয়। ব্লেন্ডারে টাইমার সংযোজন থাকলে
ম্যানুয়ালি হাতে অপারেশন করতে হয় না বরং টাইমারের মাধ্যমে মােটর নির্ধারিত টাইমের পর বন্ধ হয় এবং সামান্য
কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে আবার চলে। এভাবে কয়েকটি অপারেশন (পূর্বে নির্ধারিত করে দিতে হয় এর পর মােটর পুরােপুরি
বন্ধ হয়। সাধারণত খুব দামি ব্লেন্ডারে টাইমার অপারেশন থাকে। অর্থাৎ টাইমার অপারেশন হল হাতে অপারেশনের বিকল্প
পথ। টাইমার মােটর কন্ট্রোল ইলেক্ট্রনিক সার্কিট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এক্ষেত্রে একটি টাইমার সার্কিট থাকে, এ মূল মােটরকে
স্বয়ংক্রিয়ভাবে অফ-অন এর মাধ্যমে পরিচালনা করে। 

You may also like...

Leave a Reply