ওয়াশিং মেশিন এর কার্যপ্রণালী

ওয়াশিং মেশিন
আজকাল আধুনিক যুগে ওয়াশিং মেশিন এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। কায়িক শ্রম ও সময় অপচয় রােধে ওয়াশিং মেশিনের
ব্যবহাল জনগ্রিয়তা অর্জন করছে। ওয়াশিং মেশিনে কেমিক্যাল ও হিট এনার্জি ব্যবহৃত হয়। কিছু কিছু মেশিনে হিট এনার্জির
প্রচলন আছে। এ হিট এনার্জি কাপড় থেকে ময়লা পরিষ্কারে সহায়ক ভূমিকা রাখে। কেমিক্যাল ও হিট এনার্জি একত্রে
ব্যবহৃত হলে উত্তমরূপে কাপ  পরিষ্কার হয়। এটি ৩৩০ ওয়াট এবং ১৩০০ আর.পি.এম হয়ে থাকে এবং স্পিন টাব এর
১৩৫০ আর.পি.এম এবং ১৬০ ওয়াট হয়ে থাকে। কাপড় শুকানোর জন্য ৫ মিনিট এবং কাপড় পরিষ্কার করার জন্য ৪০
মিনিট সময় লাগে।
ওয়াশিং মেশিনের প্রকারভেদ: 
ওয়াশিং মেশিনে কাপড় পানিতে ডুবানো, কেমিক্যাল এর মাধ্যমে কাপড় পরিষ্কার, কাপড় নিংড়ানাে, কাপড় শুকানাে
ইত্যাদি হয়ে থাকে। সাধারণত যে ধরনের ওয়াশিং মেশিন বাজারে বেশি প্রচলিত, তা হলঃ
১। কনভেনশনাল টাইপ (Conventional type).
২। সেমি-অটোমেটিক টাইপ (Semi-automatic type)
৩। অটোমেটিক টাইপ (Automatic type)।
১। কনভেনশনাল টাইপ ওয়াশিং মেশিন, এ ধরনের ওয়াশিং মেশিনে শুধু কাপড় পরিষ্কার করা হয়। ময়লা কাপড়সমূহ মেশি
টাব (Tub) এ রাখা হয়। টাব একটি পাত্র বিশেষ। একটি মোটরের সাহায্যে টাবকে ক্লকওয়াইজ এবং অ্যান্টিক্লকওয়াইজ এ
ঘুটি কাপড়গুলােকে দেয়া হয় এবং আন্দোলিত (Agitating) করে পরিষ্কার করা হয়। সাধারণত সরাসরি পানির সাপ্লাই এতে
দেয়া হয় এবং ময়লা পানি বের হওয়ার ড্রেন (Drain) সিস্টেম থাকে। কাপড়গুলো আন্দোলন করার জন্য অ্যাজিটেটর
(Agilator) থাকে। প্রবাহিত পানির সাথে গুড়া সাবান মিশানাের ব্যবস্থা থাকে। এ ছাড়া একটি হিটার (2kW) থাকে, যা কাপড়
পরিষ্কার করার সময় পানিকে গরম রাখতে সাহায্য করে। কাপড় পরিষ্কার হওয়ার পর কাপড়গুলােকে ওয়াশিং ড্রামে প্রেরণ
করা হয়। সেখানে ঐমি খুন। জোরে ঘুরে ও কাপড়গুলোকে নিংড়ে অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়। প্রাথমিক অবস্থায়
কাপড়গুলােকে যখন টাবের ভিতরে সিলিন্ডার। বাস্কেটে রাখা হয়, তখন সে সময় টাবের ঘূর্ণন গতি প্রায় 500 RPM থাকে।
এ ছাড়া স্বাভাবিক অবস্থায় সিলিন্ডার বাস্কেটের ওয়াশিং । স্পিড় প্রায় 600 RPM হয় এবং কাপড় নিংড়ানাে অবস্থায় ঘূর্ণন
গতি 300 RPM হয়ে থাকে। 
২। সেমি-অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিন ও এ ধরনের ওয়াশিং মেশিন কনভেনশনাল টাইপ ওয়াশিং মেশিনের মতােই, তবে
এতে দুটি। টার (“Tb) থাকে। একটি টাব কাপড় পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহৃত হয় এবং অন্য টাবটি কাপড়গুলােকে স্পিন
(Spin) করার কাজে ব্যবহার করা হয়। এজন্য এ টাব কে স্পিন টাব বলে। এ স্পিন টাবে পরিষ্কারকৃত কাপড় শুকানাে হয়।
সেমি-অটোমেটিক টাইপ।ওয়াশিং মেশিনে অনেক সময় টুইন ট্যাব (Twin tub) ওয়াশিং মেশিন বলে। কাপড় পরিষ্কার করার
কাজে ব্যবহৃত ওয়াশ টাবটি। স্পিন টাবের চেয়ে আয়তনে বড় হয়। স্পিন টা দেখতে সিলিন্ডারের মতো। সেমি-অটোমেটিক
ওয়াশিং মেশিনের অপারেটিং
সিস্টেমকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়-
(ক) মেকানিক্যাল সুইচ এবং কন্ট্রোল সম্বলিত ওয়াশিং মেশিন
(খ) ইলেকট্রনিক সুইচ এবং কন্ট্রোল সম্বলিত ওয়াশিং মেশিন।
কার্যপ্রণালি ও সেমি-অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনে প্রথমে ওয়াশ এ টাবে ময়লা কাপড়সমূহ দেয়া হয়। ওয়াশ টাবে নিচের
তলার। এ দিকে ওয়াশিং হুইল (Washing wheel) ফিট করা আছে। এ ছাড়া গ্রিল (Grill) টাইপ নিষ্কাশন পাইপ (Drain pipe)
লাগান ঐ থাকে, যাতে কাপড় ধোয়ার পর ময়লা পানি এ পথ দিয়ে বের হয়ে যেতে পারে। ওয়াশিং টাবের উপরে এক কোনায়
একটি ওভারফ্লো সকেট আছে। এই সকেট একটি ব্যাগ ফিট করা থাকে। ওয়াশিং টাবে অতিরিক্ত পানি এ ওভারফ্লো সকেট
দিয়ে। বের হয়ে যায়। প্যানেল বোর্ডে ওয়াশিং টাইমার ফিটিং করা থাকে। ওয়াশিং মেশিনে সাপ্লাই দিয়ে চালু করার পূর্বে
ওয়াশিং সময় টাইমার দ্বারা সেটিং করতে হয়। ওয়াশিং মেশিন চালু হলে ওয়াশিং হুইল ঘুরতে শুরু করে। প্যানেল বোর্ডে
ওয়াশ সিলেক্টর সুইচ আছে, যার মাধ্যমে ওয়াশিং হুইলকে ক্লকওয়াইজ এবং অ্যান্টিক্লকওয়াইজ দিকে ঘুরানাে যায়। তা ছাড়া
জোরে বা আস্তে ঘুরানাের ব্যবস্থা আছে। ওয়াশিং কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর নির্ধারিত সময়ে পৌছালে ওয়াশিং হুইল ঘূর্ণন বন্ধ
হয় এবং টাইমার আবার তার পূর্বের পজিশনে চলে আসে। ময়লা পানি বের হওয়ার জন্য একটি সুইচ আছে, যাকে অন
করলে ময়লা পানি ড্রেইন পাইপ দিয়ে বের হয়ে যায়।  ওয়াশিং মেশিনের ডান দিকের অংশটি হল স্পিনিং সেকশন।
পরিষ্কারকৃত কাপড় এ সেকশনে আসার পর নিংড়ানো হয়। এ সেকশনে সরাসরি পরিষ্কার পানি বাইরে। থেকে আসার
ব্যবস্থা আছে। পানির ট্যাপ থেকে পাইপের মাধ্যমে সরাসরি পানি আসার ব্যবস্থা করা হয়। প্যানেল বোর্ড ওয়াটার সাপ্লাই
সেক্টর স্পিন পজিশনে রাখলে পানি স্পিন ডামে আসে ও কাপড়ের সাথে মিশে। স্পিন টাইমারের মাধ্যমে স্পিন টাইম সেট
করতে হয়। স্পিন ড্রামে কাপড় রাখার পর তার উপরের রাউন্ড (Round) কভার এবং টপ (Top) কভার বন্ধ করে দিতে হয়,
অতঃপর স্পিন মোটর চালনা করা হয়। কিভাবে বন্ধ না করলে স্পিন মোটর চালু হবে না। স্পিন ড্রাম, স্পিন টার মাঝখানে
ফিট করা থাকে। মোটর ঘুরলে স্পিন ড্রাম ঘোরতে থাকে। স্পিন ড্রাম জোরে ঘুরলে কাপড় থেকে পানি বেরিয়ে আসে এবং
স্পিন টার থেকে ড্রেইন পাইপ দিয়ে বের হয়ে যায়। এ পর্যায়ে কাপড় থেকে পানি বের হয়ে যাওয়া কাপড় শুকানো হলে।
সর্বশেষে স্পিন শেষ হয়ে গেলে স্পিন মােটর বন্ধ হয়, অতঃপর স্পিন ড্রামের ঢাকনা খুলে শুকানো কাপড় বের করে আনা
হয়। অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনে একটিমাত্র পাত্র বা টাব Tub)। থাকে, যার মধ্যে কাপড় ওয়াশিং, পরিষ্কার করা, পানি
নিংড়ানাে, কাপড় শুকানাে অর্থাৎ সব কিছুই করা হয়ে থাকে। প্রথমে টাবে পানি, লেভেল নির্দিষ্ট উচ্চতায় আনা হয়। তারপর
ডিটারজেন্ট (Detergent) মিশানােনা হয়। এরপর ময়লা কাপড় টাবে দিয়ে স্টার্ট বাটন (Start button) পুশ করলে মোটর
চলতে শুরু করে। দুই ধরনের ব্যবস্থা সম্বলিত মােটর আছে- একটি হল। অ্যাসিটেট (Agitator) টাইপ মোটর এবং অন্যটি হল
ড্রাম (Drum) টাইপ মােটর। কোন কোন ওয়াশিং মেশিনে ওয়াশিং হুইল কিট করা থাকে। মােটর ঘূর্ণন ক্লকওয়াইজ ও
অ্যান্টিক্লকওয়াইজমুখী হয়। মােটর ঘূর্ণনের মাধ্যমে ময়লা কাপড় আন্দোলিত হয়ে পরিষ্কার হতে থাকে। ওয়াটার লেভেলের
তিন ধরনের পজিশন আছে। কাপড়ের পরিমাণ অনুযায়ী পানির লেভেল নির্ধারণ করতে হয়। কাপড় পরিষ্কারে পানি গরম
করার জন্য হিটারের ব্যবস্থা থাকে। ওয়াশ সাইকেল (Wash cycle) শেষ হলে টাইমার মােটর একটি সুইচ বন্ধ দেয়। এতে
ময়লা পানি টাব থেকে বের হয়ে যায় এবং কিছুক্ষণ পরে পরিষ্কার পানি টাবে আসে। ওয়াশ সাইকেলের পর স্পিনিং টাইম
শুরু হয়। এ সাইকেল কম সময় ধরে হয় এবং অ্যাজিটেটর (Agitator) এ সময়ে কাজ করে ও টাব খালি হয়। এ পর্যায়ে
য়াশিং মেশিন শেষবারের মতো কাপড় পরিষ্কার করে ও কাপড়গুলােকে কচলাতে থাকে। এ সময়ে পরিষ্কার পানি।
একবার/দু’বার বাইরে থেকে প্রবেশ করে। পরিষ্কার হওয়ার পর ময়লা পানি দ্রুত আউটলেট পথ দিয়ে বের হয়ে যায়। শেষ
পয্যমে। কাপড় নিংড়ানাে হয়। এ সময় সিলিন্ডার বাস্কেট কয়েক মিনিটের জন্য খুব দ্রুত ঘুরতে থাকে প্রায় 13001350 R.P.M
এতে সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্সের সৃষ্টি হয় ও কাপড় থেকে সব পানি বের হয়ে আসে। সময় নিয়ন্ত্রণ টাইমার মােটর করে থাকে।
নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেলে সমস্ত কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ থাকে।  ওয়াশিং মেশিনে মূলত যান্ত্রিক শক্তি ব্যবহার করে
কেমিক্যাল ও হিট এনার্জির মাধ্যমে কাপড় পরিষ্কার করা হয়। হিট এনার্জি কাপড় থেকে ময়মকালে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
কেমিক্যাল ও হিট এনার্জি একত্রে ব্যবহৃত হলে কাপড় উত্তম রূপে পরিষ্কার হয়। কোন । কোন ওয়াশিং মেশিনে কাপড়
পরিষ্কার করার জন্য একটি পাত্র এবং কোন ক্ষেত্রে দুটি পাত্র ব্যবহৃত হয়। যে কয়টি পাত্রই ব্যবহৃত হােক না কেন কাপড়
পরিষ্কার করা, কচলানাে, পানি নিংড়িয়ে শুকানাে ইত্যাদি সব কিছুই ওয়াশিং মেশিনে হয়ে থাকে। সাধারণত তিনটি ধাপে
কাজ হয়, যথা- (১) কাপড় ওয়াশিং, (২) কাপড় কচলানাে, (৩) কাপড় শুকানাে, ওয়াশিং মেশিন পানি সরবরাহের জন্য
ট্যাপের সাথে সংযােগ থাকে। প্রথমে ওয়াশিং মেশিনের টা লেভেল অনুযায়ী পানি পূর্ণ করা। হয়। এ লেভেল কাপড়ের
পরিমাণ অনুযায়ী নির্ধারিত থাকে। কাপড় ওয়াশিং মেশিনের (টাব) পাত্রে দেয়ার পর ডিটারজেন্ট মিশানাে এ হয়। এরপর
মোটর চালিত করার জন্য সুইচ অন করলে মােটর চলতে শুরু করে। মােটর কিছুক্ষণ ক্লকওয়াইজ এবং কিছুক্ষণ ও
অ্যান্টিক্লকওয়াইজ দিকে ঘুরতে থাকে। মােটরের শ্যাফটের সঙ্গে পালসেটর অথবা অ্যাজিটেটর (Agitator) অর্থাৎ কাপড়
আন্দোলন। রার জন্য বিশেষ ধরনের ব্লেড সংযুক্ত থাকে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে সিলিন্ডার সংযােগ থাকে। এরূপ
ব্যবস্থার ফলে কাপড় দ্রুত। এ পরিষ্কার হয়। ওয়াশিং মেশিনে পানি গরম করার জন্য হিটার ব্যবস্থা থাকে। এতে কাপড়
আরও ভালােভাবে পরিষ্কার হয়। শেষ পর্যায়ে কাপড় স্পিন ড্রামে খুব দ্রুত গতিতে অল্প কয়েক মিনিটের জন্য ঘুরানাে হয়।
এ স্পিড প্রায় 1300 RPM এর মতাে। এতে সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্সের সৃষ্টি হয় এবং কাপড় থেকে সব পানি নিষ্কাশন হয়।
সমস্ত কার্য শেষ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়াশিং মেশিনের ও কার্যক্রম বন্ধ হয়। সময় নিয়ন্ত্রণ, টাইমার মােটরের মাধ্যমে
পরিচালিত হয়। কাপড় পরিষ্কারের পর ময়লা পানি ড্রেইন পাইপ দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকে।

You may also like...

Leave a Reply